Bambo News

Bambo News The Real Time News

Bangladesh lose, yet again
cricket international national

মাঠ-টস-উইকেটে যতই বদল হোক, পরাজয় যেন বাংলাদেশের ভবিতব্যই

মাঠ-টস-উইকেটে যতই বদল হোক, পরাজয় যেন বাংলাদেশের ভবিতব্যই

গত কয়েক দিন সদর স্ট্রিট-মারকুইস স্ট্রিটের মতো কিছু রাস্তা কাউকে ভুল বোঝাতেই পারত। এটা কলকাতাই তো, নাকি ঢাকা শহরের কোথাও চলে এলাম! হোটেলে-দোকানে-রেস্টুরেন্টে শুধুই বাংলাদেশিদের ভিড়। গায়ে ক্রিকেট দলের জার্সিতে যাদের অনেকেই সগর্বে ঘোষণা করছেন নিজেদের পরিচয়।

Bangladesh lose, yet again
Bangladesh lose, yet again

সবাই যে বাংলাদেশ থেকেই এসেছেন, তা নয়। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতার অংশ হতে অনেকেই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে। তা এত কষ্ট করে এসে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কলকাতা-পর্ব থেকে কী উপহার পেলেন তারা? শুধুই অন্তহীন হতাশা।

নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে গ্যালারিতে দর্শক ছিলেন হাজার পনেরো। আজ যা বেড়ে প্রায় ২৮ হাজার। তিন দিন আগে মন ভেঙে দেওয়া ওই পরাজয়ের পরও আশায় বসতি— আজ যদি কিছু হয়ে যায়! ক্রিকেটে কত কিছুই তো হয়!

পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেট হেরে বাংলাদেশের বিদায়

সাকিব আল হাসান টসে জেতার পর গ্যালারি থেকে একটা হর্ষধ্বনি। এই তো সুযোগ। প্রথমে ব্যাটিং করে যদি ভালো একটা স্কোর গড়া যায়, এমনিতেই চাপে পিষ্ট প্রায় পাকিস্তানের ওপর চাপটা তখন আরও বিষম ফাঁসে পরিণত হবে। সেই আশা কর্পূরের মতো উড়ে যেতে বেশি সময় লাগেনি। এক সময় তো সবই শেষ। স্টেডিয়াম ছেড়ে যাওয়া মানুষের মিছিল ফ্লাডলাইটের আলোয় বিষন্ন থেকে বিষন্নতর। যাদের সঙ্গী হয়তো একটা নিষ্ঠুর উপলব্দিও।

৭০ বলে ৫৬ রান মাহমুদউল্লাহর, বাংলাদেশের ইনিংসে একমাত্র অর্ধশতক
৭০ বলে ৫৬ রান মাহমুদউল্লাহর, বাংলাদেশের ইনিংসে একমাত্র অর্ধশতকএএফপি

টসে জেতা-হারায় কিছু আসে যায় না। প্রথমে ব্যাটিং না বোলিং, এতেও না। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভবিতব্য যেন পাথরে খোদাই করে লেখা।

ও হ্যাঁ, অনেক সময়ই ক্রিকেট ম্যাচের নির্ধারক হয়ে ওঠা আরেকটা অনুষঙ্গ বাদ পড়ে গেছে। ঠিক আছে, তাহলে উইকেটও যোগ করে নিন। না, তাতেও কিচ্ছু আসে যায় না। বাংলাদেশ দল যেন প্রতিজ্ঞা করেছে, মাঠ-প্রতিপক্ষ-উইকেট এসবে যতই পরিবর্তন হোক না কেন, একটা ব্যাপার অপরিবর্তনীয় থাকে। সেটি কী? টানা ষষ্ঠ পরাজয়ের পর তা কি আর বলার দরকার আছে!

পুরোনো কথাই নতুন করে বললেন সাকিব

একই মাঠে খেলা। তবে ক্রিকেটের অনেক সৌন্দর্যের এটাও একটা যে, একই মাঠের দুটি উইকেটের চরিত্রেও ভিন্নতা থাকতে পারে। কালকের উইকেটটাও যেমন নেদারল্যান্ডস ম্যাচের তুলনায় যথেষ্টই ব্যাটিংবান্ধব। কিন্তু তাতেও বাংলাদেশের ব্যাটিং যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই। তার ওপর পাকিস্তানি ফাস্ট বোলাররা এদিন আবার নিজেদের ফিরে পেয়েছেন। শাহিন শাহ আফ্রিদি-হারিস রউফ যা শুরু করেছিলেন, দুই প্রান্ত থেকে দুটি নতুন বল আসার পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া রিভার্স সুইংয়ে তা শেষ করেছেন ওয়াসিম জুনিয়র। চোখের পলকেই তাই বাংলাদেশের শেষ ৩ উইকেট নেই। আর প্রথম ৩ উইকেট? তা শুরুতেই জলাঞ্জলি দেওয়াটা তো নিয়মই হয়ে গেছে।

মাহমুদউল্লাহ ও লিটনের ৮৯ বলে ৭৯ রানের জুটিটাই বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বড়
মাহমুদউল্লাহ ও লিটনের ৮৯ বলে ৭৯ রানের জুটিটাই বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে বড়এএফপি

এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এমন করুণ দশার কারণ খুঁজে হয়রান হওয়ার কোনো দরকার নেই। দুটি তথ্যই যথেষ্ট। তথ্য নাম্বার ১: বাংলাদেশ একমাত্র দল, যাদের ব্যাটিংয়ে কোনো শতরানের জুটি হয়নি। তথ্য নাম্বার ২: প্রথম পাওয়ার প্লেতে গড়ে ২.২৯টি

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্যটা ফুটে উঠল হারের ব্যবধানেই

ব্যাটিং ব্যর্থতার সেই ধারা বজায় রেখে এদিনও প্রথম পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট নেই। আসলে তো নেই ৬ ওভারের মধ্যেই। ব্যাটিং অর্ডারে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে সাপলুডু খেলাটায় একটু বিরতি পড়েছে। বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার এদিন তাই অন্তত ক্রিকেটীয় যুক্তি মেনে চলল। ফলাফল অবশ্য সেই থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি-থোড়।

এক সময় প্রথম ওভারে উইকেট নেওয়াটাকে একরকম নিয়মেই পরিণত করে ফেলা শাহিন শাহ আফ্রিদি এদিন আবার চেনা চেহারায়। তানজিদ হাসানকে তুলে নিয়ে ওয়ানডেতে শততম উইকেট। ম্যাচের হিসেবে এই মাইলফলকে তৃতীয় দ্রুততম। পেসারদের আলাদা করে নিলে অবশ্য তিনিই এক নম্বরে। একই দিনে মেহেদী হাসান মিরাজও ওয়ানডেতে শততম উইকেট নিয়েছেন।তবে অসহায় আত্মসমর্পণের আরেকটি দিনে ব্যক্তিগত এই মাইলফলক কি আর উদযাপন করার মতো কিছু! ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে ভাগ্যকে দোষারোপ করে গেলেন। ক্রমাগত ব্যর্থ হতে হতে অসহায় মানুষ এক সময় তা-ই করে।

বল হাতে বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছেন শাহিন আফ্রিদি
বল হাতে বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছেন শাহিন আফ্রিদিএএফপি

মিরাজ থেমেছেন ১০০ উইকেটেই। তবে আফ্রিদির উইকেট নম্বর ১০১ আর ১০২-ও এই দিনেই। ১০০ আর ১০১ চার বলের মধ্যেই। নাজমুল হাসানের দুঃস্বপ্নের প্রহর যাতে আরও দীর্ঘ। সহ-অধিনায়কের ব্যাট যেন এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রতিচ্ছবি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৯ রান দিয়ে শুরু করে পরের ৬ ইনিংসে দুই অঙ্কের রান নেই। মোট রান ২৮। এমনকি তানজিদের অবস্থাও তার চেয়ে ভালো। ভারতের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি ছাড়া সেই ভালো-ও এমন কোনো ভালো নয়। বাকি ৬ ইনিংসে সর্বোচ্চ মাত্র ১৬।

দলের প্রয়োজনেই ‘যাযাবর’ মিরাজ

এমন টানা ব্যর্থতার পর নাজমুলকে একটু রেহাই দিলে তাঁর জন্যও হয়তো ভালো হতো। কিন্তু দেবেন কীভাবে? স্কোয়াডে বিকল্প কোনো ব্যাটসম্যান থাকলে তো! তৃতীয় ওপেনার নেই, মিডল অর্ডারে বিকল্প ব্যাটসম্যান— বাংলাদেশের দল নির্বাচন নিয়ে আগে থেকেই ওঠা প্রশ্নটা দিন দিন তাই বড়ই হচ্ছে।

আরও একবার হতাশ হয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশের সমর্থকেরা
আরও একবার হতাশ হয়ে ফিরেছেন বাংলাদেশের সমর্থকেরাএএফপি

শতরানের প্রথম জুটিটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য জেগেছিল। ভালো খেলতে খেলতে লিটন দাসের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার অভ্যাসে যা আর হয়নি। অফ স্পিনার ইফতিখার আহমেদের ওই বলটা একেবারে ‘বাপুরাম সাপুড়ের সাপ’। যে সাপের ‘চোখ নেই, শিং নেই, নোখ নেই’। ফোঁসফাস করার তো প্রশ্নই ওঠে না। অথচ নিরীহ সেই বলটাকেই যেন আদর করে শর্ট মিড উইকেটের হাতে তুলে দিয়ে দিলেন লিটন। নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না বলেই হয়তো অনেকক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন উইকেটে। এতক্ষণই যে, আরেকটু থাকলেই নিশ্চিত আম্পায়ারের ভৎর্সনা শুনতে হতো।

পাঁচে উঠে আসা মাহমুদউল্লাহ আবারও বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। সাকিব আল হাসান দাড়ি-টাড়ি কামিয়ে এদিন ঝকঝকে চেহারায়। ব্যাটেও কোনো স্টিকার নেই। যেন সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিলেন। ব্যাটিংয়ে এতটা ধৈর্য্য শেষ কবে দেখিয়েছেন মনে পড়ে না। দুঃসময় কাটিয়ে ওঠার সেই দাঁতে দাঁত চাপা প্রতিজ্ঞাও অবশ্য হাফ সেঞ্চুরি এনে দিতেও ব্যর্থ।

ব্যাট হাতে মোটেও ছন্দে নেই অধিনায়ক সাকিব
ব্যাট হাতে মোটেও ছন্দে নেই অধিনায়ক সাকিবএএফপি

প্রথমে ব্যাটিং করলে বাংলাদেশের ইনিংসের পরই ম্যাচ শেষ হয়ে যাওয়ার ধারা বজায় থাকল এদিনও। সেমিফাইনাল-স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে শুধু জয় নয়, নেট রান রেটের কথাও মনে রাখতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। ৫০ ওভারও খেলতে ব্যর্থ বাংলাদেশ ২০৪ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পরই তাই নিশ্চিত হয়ে যায় এই ম্যাচের স্বল্পায়ূ। শেষ পর্যন্ত তা শেষ সাড়ে ১৭ ওভার বাকি থাকতেই।

ইডেনের প্রেসবক্সের পাশেই বিবিসি রেডিওর ধারাভাষ্যকক্ষ। যেখান থেকে একটু পরপরই প্রেসবক্সে এসে বসছেন কার্লোস ব্রাফেট। এই ইডেন গার্ডেন যাঁর সবচেয়ে বড় কীর্তির সাক্ষী। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ ওভারে পরপর চার বলে ছক্কা। ইয়ান বিশপের অমর সেই ‘রিমেম্বার দ্য নেম’ চিৎকার। প্রেসবক্সে বসে সেটি দেখেছি, ২০০১ সালে এই মাঠেই ভেংকট লক্ষ্মণের ২৮১ রানের ইনিংসটিও। প্রায় চার বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে। তাই বলে মাস্তানিটা যায়নি। অবলীলায় বলে দিলেন, ‘আমার চার ছয় ওই ২৮১-এর চেয়ে অনেক ভালো।’

ফখর জামান ও আবদুল্লাহ শফিকের উদ্বোধনী জুটিই ম্যাচ সহজ করে দিয়েছে পাকিস্তানের জন্য।
ফখর জামান ও আবদুল্লাহ শফিকের উদ্বোধনী জুটিই ম্যাচ সহজ করে দিয়েছে পাকিস্তানের জন্য।এএফপি

তখন পর্যন্ত যা খেলা হয়েছে, তাতে পরপর চার ছক্কা মেরে ব্রাফেটের বিশ্বকাপ জেতানোর সত্যি ঘটনাও একটু অবাস্তব মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের পুরো ইনিংস মিলিয়েই যে চার একটি কম। ব্রাফেটকে মনে করিয়ে দেওয়ার কাজটা করলেন ফখর জামান। পরপর চার বলে চার মারেননি, তবে পাকিস্তান ইনিংসের ৯টি ছয়ের ৭টিই তো তাঁর ব্যাট থেকে।

LEAVE A RESPONSE

Your email address will not be published. Required fields are marked *

BTS extends contract with HYBE, bts job in computer operator